রিপন আল মামুন, ( জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)
মৈমনসিংহ গীতিকা ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীন পালাগানের সংকলন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা থেকে স্থানীয় সংগ্রাহকদের সহায়তায় প্রচলিত এ পালাগানগুলো সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে মৈমনসিংহ গীতিকা (১৯২৩) নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। মৈমনসিংহ গীতিকায় ১০টি গীতিকা স্থান পেয়েছে, যথা—মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ও দেওয়ানা মদিনা।
ময়মনসিংহ গীতিকার জন্মস্থান বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা এবং নেত্রকোনা জেলার কিছু অংশ। ভৌগলিক মানচিত্রে প্রাচীন ময়মনসিংহ ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে বড় জেলা। যার বিস্তৃতি ছিল উত্তরে গারো পাহাড় থেকে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর অবধি। কালে কালে ময়মনসিংহ জেলা ভেঙ্গে নতুন জেলা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা বলতে বর্তমান কিশোরগঞ্জ,নেত্রকোনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, শেরপুর, ময়মনসিংহ জেলাকেই বুঝায়।
ড. দীনেশ চন্দ্র সেন গীতিকাগুলি সংগ্রহ করান স্বশিক্ষিত এক স্বভাব কবি চন্দ্র কুমার দে’র মাধ্যমে। চন্দ্রকুমার দে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার রঘুনাথপুরের অধিবাসী ছিলেন। ড. দীনেশ চন্দ্র সেন প্রথম গীতিকা গুলির সাথে পরিচিত হন কিশোরগঞ্জের আর এক কৃতি পুরুষ কেদারনাথ মজুমদারের মাধ্যমে। কেদার নাথ মজুমদার প্রথম ‘ময়মনসিংহের ইতিহাস’ গ্রন্থ রচনা করেন। তবে দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালে ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকাশের ১০০ বছর পূর্তি হয়েছে। এই গীতিকায় পূর্ববঙ্গের মানুষের সরল জীবনের নানা দিক ফুটে উঠেছে। জীবন্ত ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার মানুষের একসময়ের আঞ্চলিক প্রেমের রূপ।