1. aalhabib001@gmail.com : Abdullah AL Habib : Abdullah AL Habib
  2. admin@sahityapatabd24.com : Admin :
  3. riponalmamun899@gmail.com : Ripon Al Mamun : Ripon Al Mamun
  4. todfgdg@gmail.com : Toshar Hasan : Toshar Hasan
বাংলাদেশের নদীগুলো: বিপন্ন ঐতিহ্য ও রক্ষার উপায় || ইতাঙ্গীর খন্দকার

বাংলাদেশের নদীগুলো: বিপন্ন ঐতিহ্য ও রক্ষার উপায় || ইতাঙ্গীর খন্দকার

  • সময় শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৫৪৩ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, এদেশের সমাজ,সংস্কৃতি, রাজনীতি এমনকি যুদ্ধের সাথেও জড়িয়ে আছে নদীপথের নানান গল্প। নদী যেভাবে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে তা অন্য কোনো কিছু পারে না। এদেশে শুধুমাত্র নদী নিয়ে বহুখ্যাতনামা সাহিত্যিক এতো পরিমাণ সাহিত্য রচনা করেছেন যে, যদি তার তালিকা তৈরী করা হয় তাহলে এর আকার হবে বিশাল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নদীর যে ভূমিকা আছে তা অন্যকোনো খাতের নেই। আমাদের সমাজ জীবনের সাথে নদী এমনভাবে মিশে আছে যে তা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে নানাভাবে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতায় সামনে নিয়ে আসে। নদীর সাথে মানুষ ও জীবনের সম্পর্ক আবহমান কাল থেকে।

পৃথিবীর বহুসভ্যতা বিকশিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। বেশি দূর নয় আমরা যদি স্বাধীন সুলতানি আমলের দিকে নজর দেই তাহলে দেখবো —সাতগাঁও, লখনৌতি, বঙ্গ,জান্নাতাবাদ, মাহমুদাবাদ কিংবা বারবকাবাদের মতো নগরগুলোর বিকাশ নদীতীরে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে তখনকার যাতায়াত ব্যবস্হা যার পুরোটাই নির্ভর করতো নৌপথের উপর। বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নদী খনন যেন অবহেলার আরেক নজির। বাংলাদেশের মানুষ যে বন্যাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে তার মধ্যে ১৯৬৬,১৯৭৪,১৯৮৮,১৯৯৮,২০০৪,২০০৭,২০২২ সালের বন্যা। তার অন্যতম কারণ যথা সময়ে নদীগুলো খনন না করা।

বিশিষ্ট গবেষক মো. আনোয়ার হোসেন তার একটি গবেষণা প্রবন্ধে লিখেছেন —“স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিলো ২৪ হাজার কিলোমিটার বর্তমানে পলি ও বালি দ্বারা ভরাট হতে-হতে সেই নৌপথ কমতে-কমতে চার হাজার কিলোমিটারে ঠেকেছে। এই নৌপথের চার ভাগের এক ভাগ মাত্র শুষ্ক মৌসুমে নৌ-চলাচল উপযোগী থাকে। নদীর নাব্য রক্ষার জন্য বছরে ৭০-৮০ লাখ ঘনমিটার পলি-বালি ড্রেজিং বা খনন করার প্রয়োজন হলেও বিআইডব্লিউটিএ মাত্র ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করতে পারে। তাও আবার এই ড্রেজিংগুলো করার হয় নদীর বিশেষ এলাকায় যা পুরা নদীর নাব্যের উপর পূরণ করা সম্ভব নয়”। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ নদীগুলো মৃতপ্রায়।যার ফলে তৈরী হচ্ছে — ফসলে পানির সংকট,পর্যাপ্ত মৎস উৎপাদন না হওয়া এবং যাতায়াত সমস্যা। আর তাতেই আমাদের জীবনে তৈরী হচ্ছে নানান জটিলতা।

দিনকেদিন নদীর প্রবাহ কমে যাচ্ছে নদীর খনন না করার কারণে। নদীর তলদেশে ধীরে-ধীরে পলি জমতে থাকলে এতে নদীর গভীরতা ক্রমেই কমতে থাকবে আর নদীর গভীরতা কমে গেলে নদী তার স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে পারবে না। এতে নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পড়ে যাবে আশঙ্কায়। আশেপাশের এলাকাগুলোতে সৃষ্টি হবে দীর্ঘকালীন জলাবদ্ধতা। অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি সহজে নদীতে প্রবাহিত হতে না পারলে স্হানীয় অঞ্চলগুলো ধীরে-ধীরে বন্যার কবলে পড়বে। অধিক পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা না থাকলেও সেচ ও পানির সংকট দেখা দেবে। নদী খনন না করার ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াবে। কৃষি কাজের জন্য পর্যান্ত পানির ব্যবস্হা না থাকলে ফসল উৎপাদনে বছরকে-বছর সমস্যার মধ্যদিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে ধান, পাট ও অন্যান্য জলনির্ভর ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হবে। নদী পলিকরণের ক্ষেত্রে নদীতে পলি জমে যাওয়ার ফলে তার গতিপথ আটকে যেতে পারে, ফলে নদী শুকিয়ে যেতে পারে বা চর তৈরি হতে পারে, যা কৃষি জমি বা মানব বসতি বিপন্ন করে তুলবে।জীববৈচিত্র্য ক্ষতি ও নদী খনন না হলে পানির প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে নদীর পরিবেশে বাস করা প্রাণীদের বাসস্থানের ক্ষতি হবে এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে পারে।মৎস্য নদী খনন না হলে মাছের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা মৎস্য চাষিদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয় নদীগুলোকে বাঁচানোর জন্য তাহলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে ধূলায় অন্ধকার। ধীরে-ধীরে এদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে।

নদীমাতৃক সম্ভবনার দুয়ার খুলতে প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ ও প্রকল্প। নদী শোধন ও পরিষ্কারকরণ প্রকল্প, নদী সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প, নদী কেন্দ্রীক পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প, নদী তীরবর্তী কৃষি-উন্নয়ন প্রকল্প, নদী দূষণ রোধে সচেতনতা প্রকল্প, নদী ব্যবস্হাপনা প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। সেগুলো থাকলেও এর কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। কারণ এটি অসংখ্য নদ-নদীর সমন্বয়ে গঠিত। দেশের অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে এসব নদীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে জলবায়ুর পরিবর্তন দূষণ ও অপরিকল্পিত ব্যবস্হাপনারর ফলে নদীগুলোর সম্ভাবনা কমে গেলেও উপরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে নদীমাতৃক সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের উচিত নদী সংরক্ষণ আইনের মেনে চলা ; নদী রক্ষা করার জন্য জনগণের উচিত কঠোরভাবে মেনে চলা , যাতে নদীতে অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয় এবং তা সংরক্ষিত থাকে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নদী সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা, যাতে সবাই নদীকে পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।বনায়ন এবং বৃক্ষরোপণ, নদীর তীরে গাছ এবং উদ্ভিদ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে নদী ও তার পরিবেশ রক্ষা করা যায়। গাছেরা নদীর পানি শোষণ করতে সাহায্য করে এবং ভূমি ক্ষয় রোধ করে।

নদী মানব সভ্যতার সাথে মিশে আছে সেই আদিকাল থেকে। বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বহিঃবিশ্বে পরিচিত নদীমাতৃক দেশ হওয়ার কারণে। যদি নদীকে আমরা বাঁচাতে না পারি তাহলে নানান জটিলতার মধ্যে পড়ে যাবো, যেখান থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রয়োজন বাংলাদেশের সমস্ত নদীগুলোর সঠিক পরিচর্যা।

লেখক: ইতাঙ্গীর খন্দকার
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved sahityapatabd24.com

Site Customized By