1. aalhabib001@gmail.com : Abdullah AL Habib : Abdullah AL Habib
  2. admin@sahityapatabd24.com : Admin :
  3. riponalmamun899@gmail.com : Ripon Al Mamun : Ripon Al Mamun
  4. todfgdg@gmail.com : Toshar Hasan : Toshar Hasan
বুক রিভিউ; যদ্যপি আমার গুরু- আহমদ ছফা - সাহিত্যপাতা | Literary Magazine

বুক রিভিউ; যদ্যপি আমার গুরু- আহমদ ছফা

  • সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২০৭৪ বার দেখা হয়েছে

রিভিউ লেখক : রিপন আল মামুন।
বইয়ের নাম : যদ্যপি আমার গুরু।
লেখক : আহমদ ছফা।
বইয়ের ধরন : গুরুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ মূলক।
প্রকাশনী : মাওলা ব্রাদার্স।
পৃষ্ঠা : ১১০

প্রথমেই বলে নেই আজকে আমি এমন একটি বই সম্পর্কে লেখার দুঃসাহস করছি, যে বইটি দুইবার পড়েও আমার মনে হয়েছে এই বইটির রিভিউ করার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা আমার নেই। কেবলমাত্র দুইবার পড়ার পর আমি যে তথ্যগুলো নোট নিয়েছিলাম সেগুলোর আলোকেই একটু লেখার চেষ্টা করছি। আর এটা রিভিউ হবে কিনা তা পাঠক বিচার করবেন। বইটি হলো আহমদ ছফার লেখা ‘যদ্যপি আমার গুরু’। বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সম্পদ। বইটি সম্পর্কে কিছু লেখার পূর্বে আগে আহমদ ছফা সম্পর্কে একটু বলে নিই। ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামে চন্দনাইশ এর গাছবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশি এই লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, চিন্তাবিদ ও গণবুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা। তারই গুরু জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এর মতে , মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন আহমদ ছফা। তাকে বিশেষায়িত করার জন্য এর চেয়ে বড় কোন বাক্য হতে পারে বলে আমি মনে করি না। তাই তাকে নিয়ে আর কিছু না বলি। এই কালজয়ী লেখক ২০০১ সালে ২৮ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আহমদ ছফা

আমি যতদূর জানি নিজের গুরুকে নিয়ে লেখা বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে নিপুন সাহিত্যকর্মটি হলো আহমদ ছফার লেখা ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি । আহমদ ছফার স্মৃতিকথামূলক এই বইটি প্রথমে দৈনিক ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’র সাহিত্য পাতায় প্রায় চারমাস ধরে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তিতে ১৯৯৮ সালে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। ১১০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করে ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স। ‘যদ্যপি আমার গুরু বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পি কাইয়ূম চৌধুরী। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের মুখবন্ধ লেখেন আহমদ ছফা নিজেই, বাংলা বাজারের আজিজ সুপার মার্কেটে বসে।

জ্ঞানতাপস  আব্দুর রাজ্জাক

বইটতে লেখক আহমদ ছফা স্মরণ করেছেন বাংলাদেশের একজন জাতীয় অধাপক, আবদুর রাজ্জাককে। তিনি হলেন আহমদ ছফার গুরু। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের সাথে প্রথম পরিচয় থেকে শুরু করে পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাবলীর কথোপকথন আহমদ ছফা খুবই সুনিপুণভাবে সাহিত্যিক রশে ফুটিয়ে তুলেছেন বইটিতে। আগে থেকে আহমদ ছফা আব্দুর রাজ্জাক কে চিনতেন না,অনেকের পরামর্শে আহমদ ছফা তার কাছে যান এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃক পরিচালিত একটি পিএইচডি প্রোগ্রামে তাঁর গবেষণার জন্য আব্দুর রাজ্জাক কে সুপারভাইজার হিসেবে গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে আব্দুর রাজ্জাক আহমদ ছফার গুরুর আসনে আসীন হতে থাকেন এবং পরবর্তীতে যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন তার কাছে।

বইটি স্মৃতিচারণ মূলক হলেও এর যথেষ্ট সাহিত্যিক গুরুত্ব রয়েছে। লেখক বইটির শুরুর দিকে গুরুর সাথে প্রথম সাক্ষাতের ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। গুরুর সাথে নিজের প্রথম দিনের সাক্ষাৎ খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতার ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন বইটিতে। আবার অকপটেই বইটিতে স্বীকার করে গেছেন যে, দিন যত যেতে থাকে, প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের প্রতি আহমদ ছফার আগ্রহ ক্রমে ক্রমে বাড়তেই ছিল। বইটিতে আরো যা আছে তা হলো- জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে ঘিরে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ এবং প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের জবানিতে বর্ণিত সমকালীন ও প্রায়-সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। বইটিতে আহমদ ছফা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে গুরু অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞান, দর্শন, দূরদর্শী চিন্তাভাবনা, সমাজচেতনা, সাংস্কৃতিক মন, আঞ্চলিকতা, বৈশ্বিক জ্ঞান, জনপ্রিয়তা, গহনযোগ্যতা ইত্যাদি প্রসঙ্গে মানুষকে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করতে চেয়েছেন।

লেখক আহমদ ছফার পড়া আমার এটিই প্রথম বই। বইটি আমি যখন প্রথমবার পড়ি তখন আহমদ ছফা এবং আব্দুর রাজ্জাক দুজনকেই আমি খুব অল্প পরিমাণে জানি। তারপর আমি আমার গুরু তুষার হাসান এর পরামর্শে পুরো বইটি দ্বিতীয় বার আবার পড়ি এবং টুকটাক কিছু নোট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম সেখান থেকে দুজনের কথোপকথনের কিছু লাইন এখানে তুলে ধরছি :

জ্ঞানতাপস  আব্দুর রাজ্জাক

গুরু আব্দুর রাজ্জাক এর কথন:

• যখন কোন নতুন জায়গায় যাইবেন পয়লা দুইটা জিনিস জানার চেষ্টা করবেন, ওই জায়গার মানুষ কি খায় আর পড়ালেখা কি করে। কী পরে আর কী খায় এই দুইটা জিনিস না জানলে একটা জাতির কোন কিছু জানন যায় না।
• সব সময় লেবু দিয়া চা খাইবেন, চায়ে যে দোষ আছে ব্যাবাক এক্কেবারে কাইটা যাইবো।
• দ্যাহেন বাংলাদেশ সরকার জসীমউদ্দীনকে কিছু করলো না আমারে আর জয়নুল আবেদীন সাহেবরে মুশকিলে ফেলাইয়া দিছে। আমাগো দুজনেরে ন্যাশনাল প্রফেসর বানাইছে, আর জসিম উদ্দিনকে কিছুই বানায় নাই।
• লেখার ব্যাপারটি হলো পুকুরে ঢিল ছোড়ার মত। যত বড় ঢিল যত জোরে ছুড়বেন পাঠকের মনে তরঙ্গ টা তত জোরে উঠবে। আর পড়ার কাজটি হইল অন্যরকম -কোন বই পইড়া নিজেরে জিগাইবেন নিজের ভাষায় বইটা লিখতে পারবেন কিনা।
• ক্ষেত চাষবার সময় জমির আইল বাইন্দা রাখতে হয় (বই পড়ার সময় টুকে রাখার অভ্যাস)।
• জ্ঞান-বিজ্ঞান ব্যক্তির সাধনায় বিকশিত হয়, কিন্তু সমাজের মধ্যে জ্ঞানের প্রয়োজন অনুভূত হওয়া চাই। বৃহত্তর অর্থে জ্ঞান বিজ্ঞানের সাধনাও বৃহত্তর সমাজ প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ।
• আমরা শিক্ষকেরা প্রতিবছর বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিটি নতুন বছরে আমাদের কাছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এসে হাজির হয়। এই তরুণদের চাহিদা, চাওয়া পাওয়ার খবর আমাদের মত লোলচর্মের বৃদ্ধদের জানার কথা নয়। এটাই হলো শিক্ষাজীবনের বড় ট্র্যাজেডি।
• বঙ্কিমের চিন্তা আধুনিক কিন্তু বিষয়বস্তু ধর্মীয়।
• রবীন্দ্রনাথ বড় লেখক, মানুষ হিসাবে রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগর কিংবা তার মত মানুষদের ধারে কাছে বসতে পারেন না, বড় লেখক ও বড় মানুষ এক নয়। বড় লেখক এর মধ্যে বড় মানুষের ছায়া থাকে। আর বড় মানুষ আসলেই বড় মানুষ।
• ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত শেখ সাহেব যারেই স্পর্শ করছে তার মধ্যে আগুন জালাইয়া দিছে।
• যে জাতি যত মিডিলাইজড তার রান্নাবান্নাও তত বেশি সফিস্টিক্যাডেড।
• রেনেসাঁর আগে পরকালটাই আছিল সব আর রেনেসাঁর পরে এই দুনিয়াটাই সব পরকাল কিছুই না।
• ইসলাম ধর্মের সাথে অন্যান্য ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে ইসলাম ধর্মেও পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা হইছে। কিন্তু ইহকালের গুরুত্ব অস্বীকার করা হয় না।

আহমদ ছফা 

শিষ্য আহমদ ছফার কথন :

• মাতৃস্তনে শিশুর যেরকম অধিকার শিক্ষকদের স্নেহের উপর ছাত্রদের তেমন অধিকার থাকা উচিত।
• সৃষ্টিশীল মানুষেরা সাধারণত বিপদজনক ধরনের হয়ে থাকে। বাইরে তারা যতই নিরীহ এবং অপরের প্রতি মনোযোগী হয়ে থাকুক না কেন ভেতরে স্বেচ্ছাচারী হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
• তরুণ বয়সে মানুষের শরীরে কোন অংশে চোট লাগলে যৌবনে সে অনুভব করা যায় না অনেক সময়। বুড়ো হলে ব্যথাটা ফিরে আসে।
• ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় একযুগ সময়ের সবটাই কম করে হলেও অন্তত সপ্তাহে একবার প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে দেখা করেছি।
• মানুষের মন ভারি বিদঘুটে জিনিস। কত অসম্ভব বস্তুর কল্পনা করে।

অন্যান্য কয়েকটি তথ্য :

• আহমদ ছফাকে আব্দুর রাজ্জাক প্রথম যে বইটা পড়তে দেন সেটি হল লেলিনের ‘ইকোনমিক হিস্ট্রি অফ রাশিয়া ‘।
• প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের জবানিতে বইটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের নাম উল্লেখ রয়েছে যেমন
১। দ্য ওয়েলথ অফ নেশন – অ্যাডাম স্মিথ (অর্থনীতি নিয়ে লেখা)।
২।ফ্যাক্টরস ইন মডার্ন হিস্ট্রি -শিল্প বিপ্লব নিয়ে লেখা।
৩।ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন – টয়েনবির (ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব নিয়ে লেখা)।

সবশেষে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি সম্পর্কে বলতে পারি খুবই চমৎকার একটি বই। বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষিত সমাজ যারা ন্যূনতম হলেও সাহিত্যের খোঁজ খবর রাখেন তারা পুরো বইটি না পড়লেও এই বইটির নাম শুনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। এই বইটি সম্পর্কে এতক্ষণ যা কিছু বললাম তা সবই আমার চিন্তা চেতনা এবং বইটি পড়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বলা অথচ বইটির রিভিউ এবং সাহিত্যিক মূল্য এরও অনেক উপরে। তাই আমি পাঠককে অনুরোধ করব যদি বইটি না পড়ে থাকেন তাহলে বইটি পড়তে পারেন। আমি এতটুকু বলতে পারি যে নিঃসন্দেহে বইটি আপনার ভালো লাগবে।

 

রিভিউ লেখক : রিপন আল মামুন, শিক্ষার্থী : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved sahityapatabd24.com

Site Customized By