1. aalhabib001@gmail.com : Abdullah AL Habib : Abdullah AL Habib
  2. admin@sahityapatabd24.com : Admin :
  3. riponalmamun899@gmail.com : Ripon Al Mamun : Ripon Al Mamun
  4. todfgdg@gmail.com : Toshar Hasan : Toshar Hasan
বুক রিভিউ; মনোবিশ্লষণ - সিগমুন্ড ফ্রয়েড

বুক রিভিউ; মনোবিশ্লেষণ- সিগমুন্ড ফ্রয়েড

  • সময় রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৭ বার দেখা হয়েছে

রিভিউ লেখক : রিপন আল মামুন
বইয়ের নাম : মনোবিশ্লেষণ ( বাংলা অনুবাদ)
লেখক : সিগমুন্ড ফ্রয়েড
বইয়ের ধরন : মনোবিজ্ঞান
প্রকাশনী : হাওলাদার প্রকাশনী
পৃষ্ঠা : ১১০

যে বইটির রিভিউ লিখতে শুরু করছি সেটির লেখক যুগান্তকারী চিন্তাবিদ ,প্রভাবশালী দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী, মানসিক রোগ চিকিৎসক, মনস্তাত্ত্বিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তিনি “মনোসমীক্ষণ” (Psychoanalysis) নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক। হাওলাদার প্রকাশনীর উদ্যোগে প্রকাশিত মনোবিশ্লেষণ বইটি মূলত সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর মনঃসমীক্ষণ বা মনোবিশ্লেষণ প্রসঙ্গে মোট পাঁচটি গবেষণা পত্রের সংকলন। সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১৯০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মনোবিশ্লেষণ সম্পর্কে তার মতবাদ উপস্থাপিত করার জন্য আমেরিকা থেকে আমন্ত্রণ পান। ম্যাসাচুসেটস-এর উরসেস্টারে ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট স্ট্যানলি হলের থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিংশতি বর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে এই পাঁচটি বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ পান তিনি। সেখানে ফ্রয়েড তার মনোবিশ্লেষণ সম্পর্কে তার এই পাঁচটি বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ভিয়েনায় বহু বছরের গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই বক্তৃতামালায় ফ্রয়েড জানিয়েছেন কেন তিনি সম্মোহনকে পরিত্যাগ করলেন, কেনই বা গ্রহণ করলেন অবাধ অনুষঙ্গ এর পদ্ধতি। সেই সঙ্গে এখানে এসেছে স্বপ্ন ব্যাখ্যা, আপাতভাবে এলোমেলো নানান কাজ, ভুলের প্রসঙ্গও। এছাড়া খুব গুরুত্বের সাথে তিনি যৌনতার প্রসঙ্গটিও ব্যাখ্যা করেছেন এখানে।

এই বক্তৃতামালা ইংরাজিতে অনূদিত হয়ে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে American Journal of Psychology-তে প্রকাশিত হবার অনতিবিলম্বে মূল জার্মান ভাষাতেও প্রকাশ পায়। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে নানা ভাষায় অনূদিত হয়ে এটি বহুল প্রচারিত হয় এবং ফ্রয়েডকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সমাজের সামনে উপস্থিত করে। তৎকালীন অস্ট্রিয়া হাঙ্গারি সাম্রাজ্যের অন্তর্গত মোরাভিয়ার ফ্রেইসবার্গে ছোট্ট একটি শহরে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ই মে জন্মগ্রহণ করেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। এই মনঃসমীক্ষণ বা মনো বিশ্লেষণ তত্ত্বটা তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে। ৮৩ বছরের জীবনকালের সামগ্রিক কর্মকে ছাপিয়ে গেছে তার সাইকোএনালাইসিস বা মনঃসমীক্ষণ তত্বটি।

যদিও এটি তার বক্তৃতার একটি সংকলন গ্রন্থ। মোট ৫ টি বক্তৃতার মধ্যে তার মনঃসমীক্ষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। প্রথম বক্তৃতার শুরুতেই ফ্রয়েড বলেন মনঃসমীক্ষণকে জনসমক্ষে আনার কৃতিত্ব তার নয়। ফ্রয়েড যখন ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সেই সময়ে এক ভিয়েনাবাসী চিকিৎসক ড: জোসেফ ব্রিউয়ার (১৮৮০-৮২) এই পদ্ধতিটি একটি হিস্টিরিয়া আক্রান্ত বালিকার উপরে চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করে। পরবর্তীকালে ব্রিউয়ারের প্রকাশিত ‘Studies on Hysteria ‘ (1895) বইটির ওপর তার বেশকিছু মতামত আলোকপাত করেন। ব্রিউয়ারের চিকিংসা পদ্ধতি, তার রোগীদের রোগ বর্ণনা, মনঃসমীক্ষণের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা বলি ফ্রয়েড তার নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে তুলে ধরেন।

ফ্রয়েড তার এই বক্তৃতা মালায় স্বপ্ন ব্যাখ্যা, মানব মনের বিভিন্ন স্তর, মানসিক শক্তির ক্রিয়া , অবাধ অনুষঙ্গ এমনকি শিশুর মনের যৌনতার ক্রিয়াও ব্যাখা করেছেন। ফ্রয়েড স্বপ্নের ব্যাখা করতে গিয়ে বলেন ‘স্বপ্নের প্রকাশ্য উপাদান হলো নিজ্ঞান-স্তরের স্বপ্ন-বাসনারই বিকৃত বিকল্প (distorted subsitute)। অহং (Ego)-এর আত্মরক্ষামূলক শক্তি তথা প্রতিবন্ধকই এই বিকৃতি ঘটিয়ে থাকে। জাগ্রত অবস্থায় এই প্রতিবন্ধকগুলি সবাই মিলে ‘নিজ্ঞান স্তরে অবদমিত’ ইচ্ছাকে চেতন স্তরে প্রবেশ করতে দেয় না। ‘ফ্রয়েডের বক্তৃতায় আরো উঠে আসে যে মনোরোগের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে তার যৌন অস্বস্তি। তিনি বলেন ‘সর্বপ্রথম আমরা একটি জিনিস জেনেছি। মনঃসমীক্ষামূলক গবেষণায় বিস্ময়করভাবে বারংবার দেখা গেছে যে রোগীর মনোরোগের উপসর্গগুলির যোগসূত্র ধরে তার উৎস মিলেছে রোগীদের যৌনজীবনের স্মৃতিতে। এই পদ্ধতির সাহায্যে জানা যায়-রোগসৃষ্টিকারী আকাঙ্ক্ষার আবেগের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই অসুস্থতার পিছনে যার প্রভাব সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তা হলো যৌন অস্বস্তি।)’

ফ্রয়েত তার চতুর্থ বক্তব্যে শিশুর যৌনতার বিকাশ নিয়ে কথা বলেন।সেখানে উঠে আসে পিতামাতার সাথে শিশুদের সম্পর্ক মোটেই যৌন উত্তেজনার উপাদান থেকে মুক্ত নয়। শিশু যদি পুত্র হয় তাহলে তার মনে সে পিতার ভূমিকা নিতে ইচ্ছা করে এবং কন্যা শিশু মনে মনে নিজেকে মাতার ভূমিকায় কল্পনা করে। এখানে উদাহরণ টেনে ফ্রয়েড বলেন
‘রাজা অয়দিপাউসের পিতাকে হত্যা করে নিজেরই মাতাকে বিবাহ করার পৌরাণিক কাহিনী হলো শৈশবকালীন ইচ্ছারই সামান্য রূপান্তরত রূপ। যতদিন পর্যন্ত শিশুর অবদমন মুক্ত কেন্দ্রীয় জটিলতা তার ওপরে আধিপত্য করে, ততদিন তার বুদ্ধিবৃত্তিগত কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশই তার যৌন আগ্রহ মেটাতে ব্যয়িত হয়।)’

ফ্রয়েডের সর্বশেষ পঞ্চম বক্তৃতার মূল বিষয়বস্তু ছিল তার মানোবিশ্লেষণ তত্বের পক্ষে উপস্থাপিত কিছু যুক্তি। তিনি এর সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘বাসনার আবেগের শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে অবদমিত করে রাখা একবার ব্যর্থ হলে সেই শক্তির প্রতিপত্তি আরো বৃদ্ধি পায়, বিশেষত সেই আবেগ যদি চেতন স্তরের বদলে অবচেতন স্তরে ক্রিয়াশীল থাকে তাহলে তো বটেই। সুতরাং এই বাসনাকে চেতন স্তরে আনার ফলে এটি শুধুমাত্র দুর্বলই হতে পারে। অবচেতন স্তরের কোনো ইচ্ছাকে প্রভাবিত করা যায় না এবং এটি বিপরীত প্রবণতা থেকে মুক্ত; তুলনায় কোনো সচেতন বাসনাজনিত আবেগ চেতন স্তরের অন্য কোনো বিপরীত চিন্তার দ্বারা অবদমিত হয়ে থাকে। সুতরাং অবদমনের ব্যর্থ চেষ্টার বদলে বরং মনঃসমীক্ষণের কাজ তাকে সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে মূল্যবান সাংস্কৃতিক ধারায় স্থাপিত করেছে, যেটি বিকল্প হিসেবে নিশ্চয়ই ভালো। মনঃসমীক্ষণ কার্যের দ্বিতীয় ফল হলো-এর ফলে যে অবদমিত প্রবৃত্তি উন্মোচিত হয়, তাকে সদর্থক কাজে সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়।’যারা মনঃসমীক্ষণ কে বিরোধিতা করতো তাদের আশংকা ছিল এই চিকিৎসার পরিণামে প্রবৃত্তিগুপে অবদমন মুক্ত রোগীর সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বকে ধধ্বংস করে দিবে, কিন্তু ফ্রয়েড মনে করেন বাস্তবে তা অসম্ভব।

বইটি থেকে সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।

১৷ বইয়ের নাম:
★ The Interpretation of Dreams (1900) – Sigmund Freud
★ Studies on Hysteria (1895) – ডঃ জোসেফ ব্রিউয়ার
★ The psychopathology of Every day life – Sigmund Freud
★ Project for a scientific psychology ( সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ৪০ হাজার শব্দের একটি প্রবন্ধ। প্রবন্ধটি প্রেরণ করেন বার্লিন প্রবাসী চিকিৎসক বন্ধু উইলহেম ফ্লিসকে)

২। কিছু টার্ম:
★ Aphasia – মস্তিষ্কে আঘাত জনিত বাকরোধ
★ Metapsychlogy – অধিমনোবিদ্যা
★ Psychic trauma – মনস্তাত্ত্বিক আঘাত
★ Macropsia- দর্শন অক্ষমতা
★ Convergent squint- দৃষ্টি শক্তি টেরিয়ে যাওয়া

৩। তথ্যে ফ্রয়েড
★ জন্ম: ১৮৫৬ সালের ৬ মে মোরাভিয়ার ফ্রেইসবার্গ শহরে।
★ প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় শরীর গঠনতত্ব ( anatomy) ও শারীরবৃত্ত ( physiology) বিষয়ে ১৮৭৭ সালে।
★ চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক: ডক্টর অফ মেডিসিন হন ১৮৮১ সালে।
★ ফ্রয়েড এর কর্কট ও ক্যান্সার রোগ হয়েছিল।
★ মনোবিজ্ঞানী মেনার্ট ফ্রয়েডের শিক্ষক ছিলেন।
★ অবাধ অনুষঙ্গ পদ্ধতির প্রবর্তক – ফ্রয়েড
( পদ্ধতিটি হল যে ব্যক্তির মনকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে তার মনে যা আসছে সেটা বলতেই থাকে উৎসাহী করা)
★ ১৯৩৩ সালে জার্মা-নিতে হি-ট-লার ক্ষমতা গ্রহণ করলে প্রকাশ্যে ফ্রয়েড এর বই পোড়ানো হয়
★ মৃত্যু: ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ সালে।

৪। ফ্রয়েডের কিছু উক্ত
– মনকে অতীতের যন্ত্রণায় আটকে রাখা এটা স্নায়ু ঘটিত একটা রোগের বৈশিষ্ট্য
– সত্য বলা সর্বদা সহজ নয়, বিশেষত যখন তা সংক্ষেপে বলতে হয়
– কোন একজন কেমন করে মনঃসমীক্ষক হতে পারে এই প্রশ্ন যদি আমাকে করা হয় আমি জবাব দেবো নিজেরই স্বপ্নকে বিশ্লেষণ ও চর্চার মাধ্যমে।
– যতদিন পর্যন্ত শিশুর অবদমন মুক্ত কেন্দ্রীয় জটিলতা তার ওপরে আধিপত্য করে, ততদিন তার বুদ্ধিবৃত্তিগত কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশই তার যৌন আগ্রহ মেটাতে ব্যয়িত হয়।)
– ব্যক্তির নিজস্ব সুখ ও পরিতৃপ্তির বিষয়টিকে যে আমাদের সভ্যতার লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে দেওয়া যায় না সেটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়

পুরো লেখাটা ধৈর্য ও মনযোগের সাথে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

রিভিউ লেখক : রিপন আল মামুন, শিক্ষার্থী : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved sahityapatabd24.com

Site Customized By