বাজেট হলো কোনো নির্দিষ্ট অর্থ বছরে একটি দেশের সরকারের আয় ও ব্যায়ে সম্ভাব্য হিসাব। বাংলাদেশে প্রতিবছর জুন মাসে আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করা হয়। আজকে পেশ করা হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা । এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। অর্থাৎ ৭ হাজার কোটি টাকা কম ।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। আর প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। আসন্ন এই বাজেটে উচ্চাভিলাষী কোনো লক্ষ্যমাত্রা থাকছে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫.২৫ শতাংশ । বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে ১১৬০০০ কোটি টাকা । দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্প (এডিবি)বাস্তবায়নের জন্য ২,৩০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে । সরকারের ঋণের ওপর সুদের পেমেন্ট বাবদ ১,২২,০০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে । অর্থবছর ২০২৫-২৬ এ বাজেট ঘাটতি দেশের মোট জিডিপির ৪.৬%।সরকার পরিচালনার অন্যান্য খরচ, বেতন-ভাতা বাবদ ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে ।
উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ও রাজস্ব বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। রাজস্বনীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাজেটে সংস্কার কমিশন ও টাস্কফোর্স রিপোর্টের সুপারিশগুলো প্রতিফলিত হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সহায়তা পেতে বাজেট ঘাটতি কমানো, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এবার রাজস্ব বাড়াতে সরকার কর সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে আছে ১৫ শতাংশ অভিন্ন ভ্যাট হার চালু করা ও কর রিটার্ন দাখিলের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশলও নেওয়া হচ্ছে। এবারের বাজেটে ব্যাক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা । জুলাই যোদ্ধার করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা । সারাদেশে নূন্যতম আয়কর ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে কৃষি আয় ৫ লাখের বেশি হলে আয়কর দিতে হবে । এইগুলোসহ আসন্ন বাজেট ২০২৫-২৬ এ আয়করে অর্ধশত পরিবর্তন আনা হয়েছে।
রাজস্ব চাপ কমাতে সরকার বিদেশি ঋণের ওপর বেশি ঝুঁকবে। বিশেষ করে, বাজেট সহায়তার জন্য। রাজস্ব আয় কম হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষায় খরচ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। তবুও এই খাতগুলো সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে। ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত বা বাইরে রাজস্ব আদায় করা হবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
এই বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ-সার ভর্তুকি এবং সুদের খরচ মেটানোর দিকে। একইসাথে রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ এনবিআরের মাধ্যমে তোলা হবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪.৬% যা উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে মানানসই। এখান দেখা যাক এই বাজেটটা জনস্বার্থে কতটা কার্যকরী হয়। জুলাই পরবর্তী সংস্কাররত বাংলাদেশ বিনির্মাণের কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এই বাজেট সেটাই বড় প্রশ্ন।
মোঃ আজিজুল ইসলাম
শিক্ষার্থী: অর্থনীতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।